কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে অধিক ফলনের আশায় কৃষি জমিতে ব্যাপক হারে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় নেতিবাচক প্রভাব পরছে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর। বাড়ছে উৎপাদন খরচও। সেই সাথে কৃষি জমিতে সার ও কীটনাশকের অধিক ব্যবহারের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে মাটির স্বাস্থ্যের গুণগতমান।
জানা গেছে, জেলায় বছর বছর কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশ প্রান্তিক কৃষকরা। তারা খরচ পুষিয়ে নিতে অধিক ফলনের আশায় মনগড়াভাবে সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করছে। এতে জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা শক্তি। পরিবেশ বিপর্যয়সহ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জীব-বৈচিত্রের ওপর। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার-কীটনাশক ব্যবহারের কারণে জেলার মানুষ প্রতিনিয়ত চর্মসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত সার-কীটনাশক ব্যবহারের কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। এবারে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ৪০ হেক্টর। ভুট্টার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৯৫০ হেক্টর। এবারে বোরো আবাদে জেলায় গড়ে হেক্টর প্রতি সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকের ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার টাকা। মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪৩ কোটি ৯৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আলুতে সার ও কীটনাশ ব্যবহারে হেক্টর প্রতি ৫০ হাজার টাকা হারে ৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। এছাড়া ভুট্টাতে হেক্টর প্রতি দু’হাজার টাকা হারে প্রায় ১৯ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হবে কৃষকের। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো, আলু, ভুট্টা, গম, সবজি, আমের মুকুলসহ অন্যান্য ফসলী উৎপাদনে গড়ে প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার সার ও কীটনাশক জমিতে ব্যবহৃত হবে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কৃষক জিতেন্দ্রনাথ সরকার ও অজয় সরকার জানান, কৃষকরা প্রতিযোগিতামূলকভাবে অধিক ফলন পাওয়ার আশায় বেশি বেশি করে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে। এরফলে জমির যে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে তা জেনেও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করছে। কৃষি বিভাগের এ ব্যাপারে কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, কৃষকরা তাদের ইচ্ছে মতো সার-কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এজন্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, মাটির গুণগতমান কমে যাচ্ছে, পরিবেশ এবং মানব দেহের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তবে কৃষি বিভাগ অধিক সার-কীটনাশক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায় কাজ করছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, নিউজ টিপিবি এর দায়ভার নেবে না।