শিরোনাম

  এয়ার টিকেট মূল্য ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে যেয়ে বিপাকে আটাব, পেছন থেকে গোপনে মদদ দেয়ার অভিযোগ এয়ারলাইন্স, OTA এবং অভিযুক্ত সিন্ডিকেট ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে।       আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ, ঢাকা সেনানিবাসের দরপত্র আহ্বান       হামাসকে ইসরায়েলি নারী, আপনাদের কাছে আমার মেয়ে রাজকন্যার মতো ছিল       চেয়ারম্যান সাব্বির খানের বিরুদ্ধে ঘুষের টাকার জন্য প্রতিবন্ধী পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ- গোপালগঞ্জ।       ইসলামী অর্থনীতিতে দান এবং যাকাত এক নয়। যাকাত বঞ্চিতদের পাওনা - মোঃ মাসউদুর রহমান।       উর্ধমুখী এয়ার টিকেট মূল্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রেমিট্যান্স যোদ্ধারাই বলে মন্তব্য করেন মোঃ মাসউদুর রহমান       নৌকার প্রার্থীর আবেদনে ঢাকা উত্তর সিটির ৬ নং ওয়ার্ডের ভোট পুনর্গণনার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত       চাঁদপুরের মতলব(উঃ) শিক্ষককে হত্যা চেষ্টায় বাহির থেকে তালা দিয়ে আগুন!       বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে চারটি ইউনিট       পর্যটনের অপার সম্ভাবনা হতে পারে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া সাথে জামাই চা!    

তেঁতুলিয়ায় নদীগুলোর উজানে ভারতে বাঁধ নির্মাণ, জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২২, ০৮:২১ সকাল
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২২, ০৮:২১ সকাল

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি: বাংলাদেশ মানচিত্রের শীর্ষে সর্বউত্তরের সীমানা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণ করায় জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।


জানা গেছে, তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমানা শেষে পঞ্চগড় সদরের সংগে আলাদা করেছে চাওয়াই নদী। ছোট-বড় এই নদীগুলো ভারত থেকে প্রবাহিত হয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলার বুক চিরে ভাটির দেশে বয়ে গেছে। নদীগুলোর মধ্যে নেপালের হিমালয় পর্বত ও ভারতের সিকিম রাজ্যেও সীমানা ঘেঁষে মহানন্দা নদী ভারত সীমান্ত প্রবাহিত হয়ে বাংলাবান্ধা ঝাড়ুয়াপাড়া নামক স্থানে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে ভারত-বাংলাদেশ ভূখন্ডকে আলাদা করেছে। এই মহানন্দা ঝাড়ুয়াপাড়া থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ভারতে প্রবেশ করেছে। এছাড়া ভারত থেকে প্রবাহিত ডাহুক, করতোয়া ও চাওয়াই নদী তেঁতুলিয়া উপজেলা ও পঞ্চগড় জেলার ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে। কিন্তু নদ-নদীর উজানে প্রতিবেশী ভারত আন্তর্জাতিক সংযুক্ত নদী কমিশন চুক্তি (ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও চীন) শর্তাবলী লঙ্ঘন করে বাঁধ নির্মাণ করেছে। এই বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাটির দেশে নদীগুলোতে পানি শুকিয়ে নদীগুলোর বুকে ধূ ধূ বালুচর জেগে উঠেছে। বড় নদীগুলোতে পানি প্রবাহ না থাকায় তিরনই নদী, গবরা নদী, বেরং নদী, ভেরসা নদীর বুকে চর জেগে মরা খালে পরিণত হয়েছে। আর এসব নদীর মরা খালে এলাকার চাষীরা বোরো-ইরি ধানসহ নানান রবিশস্য চাষাবাদ করছে। এসব নদীর পানি প্রবাহ না থাকায় প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়েছে।


জানা গেছে, ভারত অভিন্ন ৫৪টি নদীর মধ্যে ৩৮টি উজানে ড্যাম, ব্যারেজ ও গ্রোয়েন নির্মাণ করেছে। একইভাবে ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে মহানন্দা নদীর উজানে শিলিগুড়ি (ভারত) ফুলবাড়ি নামকস্থানে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে। ফলে বাংলাবান্ধা থেকে তেঁতুলিয়া সদরের পুরাতন বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩০ কিলোমিটার বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষে প্রবাহিত খরস্রোত মহানন্দা নদীর বুকে ধূধূ বালুর চর জেগে উঠেছে। এছাড়া ডাহুক নদীর উজানে ভারত রায়গঞ্জ নামকস্থানে স্লুইচগেট নির্মাণ করায় নদীটি মরে গেছে। অনুরুপভাবে ভারতের রায়গঞ্জ মদনবাড়ী ও ভদ্রেশ্বর সাও নদী ও করতোয়া নদীর মিলনস্থলে উজানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ ঘুরিয়ে নেন। এই করতোয়া নদী ভজনপুর-ভদ্রেশ্বর নামকস্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমানা ঘেঁষে পঞ্চগড় শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে। ওই বাঁধের কারণে করতোয়া নদীটি পানি শুকিয়ে ধূ ধূ বালুর চর জেগে উঠেছে। একইভাবে চাওয়াই নদীর উজানে স্লুইচগেট নির্মাণের কারণে নদীতে পানি নেই। এসব নদীগুলোতে পানি প্রবাহ না থাকায় দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ, জোঁক, ব্যাঙ ছোট বড় জলজ প্রাণিগুলো বিলীন হয়েছে। নদীতে প্রয়োজনীয় পানি প্রবাহ না থাকায় আশপাশের ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘূর্ণিঝড়, প্রচন্ড খরা, নতুন পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের প্রাদূর্ভাব দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি গাছপালা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এদিকে বর্ষা মৌসুমে ভারত মাঝে মধ্যে সবগুলো নদ-নদীর স্লুইচগেট একসংগে খুলে দেয়ায় নদীর ভাটির অঞ্চলে ফসলের ক্ষতিসহ বাড়িঘর বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ মানসিকভাবে হয়রানি হচ্ছে।


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক ও উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান বলেন, এবছর জানুয়ারি মাসের দিকে বগুড়া বাপার একটি দল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া পর্যন্ত নদ-নদীগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এসময় দেখেছি অনেক বড় বড় নদী অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করায় নদীর সঠিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক নদীগুলোর উজানে বাঁধ নির্মাণ করায় ভাটির অঞ্চলে নদীর পানি প্রবাহ নেই। ফলে অনেক নদী হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং নদীর আশপাশে জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়েছে। প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র হুমকির হাত থেকে রক্ষার জন্য নদীর গতিপথ সচল রাখতে সরকারকে প্রতিবেশী দেশের সংগে আলোচনা করে পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।


জাহাংগীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও তেঁতুলিয়া শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কবীর আহমেদ আকন্দ বলেন, আন্তর্জাতিক জয়েন্ট নদী কমিশন চুক্তির শর্তানুযায়ী উজানের দেশ থেকে প্রবাহিত নদ-নদী যেগুলো ভাটির দেশে প্রবেশ করেছে তাতে কোন ধরনের স্লুইচগেট ও বাঁধ নির্মাণ করতে পারবে না। আর যদি কোন দেশ তা করে তবে চুক্তি ভঙ্গের আইনে অভিযুক্ত হবেন। কারণ বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীগুলোতে পানি প্রবাহ না থাকায় জীববৈচিত্রসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব বিরাজ করার পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে প্রাকৃতি পরিবেশ চরম হুমকির সম্মুখীন হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, নিউজ টিপিবি এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়