জয়নাল আবেদিন বাবুল, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাও) প্রতিনিধ: দখল, দুষণ আর ভরাট হওয়ার কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের নদীগুলি মরা খালে পরিণত হলেও সাগুনী এলাকায় রাবার ড্যাম নির্মাণের কারণে টাঙ্গন নদীর বিশাল অংশে চৈত্র মাসেও পানিতে টইটম্বুর অবস্থা বিরাজ করছে। আর রাবার ড্যামের উজানে জমানো এ পানিতে লো-লিফ্ট পাম্প এবং স্যালো মেশিন দিয়েই চলছে চাষাবাদ। চলতি শুস্ক মৌসুমে নদীর দু’ধারে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে বোরো ধানসহ নানা ধরণের রবি ফসল। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছ। পরিবর্তন এসেছে জীববৈচিত্র্যেও। অপরদিকে ড্যামের ভাটিতে এখন এর পুরো উল্টো চিত্র। ড্যামের রাবারের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়া বাড়তি পানি বইছে ক্ষীণ ধারায়। দেখে মনে হচ্ছে যেন মরা খাল।
বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পীরগঞ্জ ইউনিটের সহকারী প্রকৌশলী খায়রুল আলম জানান, ভু-উপরিস্থ পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ টাঙ্গন নদীর সাগুনী রাবার ড্যাম এলাকায় ৮টি এবং রাণীরঘাট ড্যাম এলাকায় ২১টি লো লিফ্ট পাম্প চালু রয়েছে। নদীতে মজুদ করা সেই পানি দিয়েই নদীর দু’ধারে সাগুনি, বাঁশগাড়া, চাপোড়, মছলন্দপুর, মশালডাঙ্গী, মালঞ্চা, নাকাটি, ফুটকিবাড়ি, ভামদা, সুলতানপুর, সেনিহারি, বৈরচুনা, আজলাবাদ, শিরাইল, চান্দোহরসহ ১৭/১৭টি গ্রামের বিশাল এলাকা জুড়ে জমিতে চলছে চাষাবাদ। যা আগে পড়ে থাকত অনাবাদি হিসেবে। পাম্পগুলি দিয়েও প্রায় এক হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। এতে ২০ হাজার কৃষক তাদের জমিতে সেচ দিতে পারছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর দেশি মাছও।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, টাঙ্গন নদী ক্রমেই ভরাট হওয়ার কারণে পৌষ-মাঘ মাসেই নদীর পানি শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হতো। ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত নদীর পানি গড়িয়ে চলে যেত ভারতে। এ অবস্থায় খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৫ টাঙ্গন নদীতে পীরগঞ্জ উপজেলার সাগুনি এবং রাণীরঘাট এলাকায় দুটি রাবাম ড্যাম নির্মাণ করা হয়। প্রথম দিকে রাবার ড্যাম পরীক্ষা মূলকভাবে চালু করা হলেও কয়েক বছর ধরে পুরোদমে চালু হয়েছে। আগে এ সময় নদী শুকিয়ে গেলেও বর্তমানে রাবার ড্যামের রাবার ফুলিয়ে পানি আটকে রাখার ফলে ড্যামের উজানে নদী ফিরে পেয়েছে ভরা যৌবন। দেখে মনে হয় বর্ষাকাল।
সাগুনী রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিব উদ্দীন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে রাবার ড্যামে সুফল পাচ্ছে এলাকার লোকজন। এরই মধ্যে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমি রাবার ড্যামের সেচের আওতায় রয়েছে। কৃষকদের খরা মৌসুমে আর পানির কোন সমস্যা হচ্ছে না। লো লিফ্ট পাম্প ছাড়াও অনেকে স্যালো মেশিন দিয়েও নদীর পানি দিয়ে চাষাবাদ করছেন। আগে নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এ সুবিধা পাচ্ছিলেন না কৃষকরা। এছাড়াও নদীতে পানি থাকায় দেশি প্রজাতির মাছও ধরা পড়ছে। জেলেরাও এর সুফল ভোগ করছে। এর আগে নদীর পানি ভারতে চলে যেত। এখন সেই পানি আমরা ব্যবহার করতে পারছি।
সুগুনী এলাকার কৃষক সাইদুর জানান, আগে নদীতে পানি থাকতো না। রাবার ড্যাম হওয়ার পর নদীতে পানি থাকছে। আমরা কৃষকরা সহজেই সে পানি দিয়ে বোরোসহ নানা ধরনের ফসল আবাদ করতে পারছি। আগে এ সুবিধা পাওয়া যেত না।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজেন্দ্র নাথ জানান, রাবার ড্যাম সুফল পাচ্ছে কৃষক। রাবার ড্যাম এলাকায় নদীর দু’ধারের বিশাল পতিত জমি সেচের আওতায় এসেছে। তাছাড়া ভুগর্ভস্থ পানিতে আয়রণ থাকার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু নদীর পানিতে কোন আয়রন থাকে না এতে ফলন বাড়বে। সেঁচের খরচও কম হবে। তাছাড়া ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ওপর উঠে আসায় আশপাশে সাধারণ মানুষ টিউবওয়েল বা নলকুপের মাধ্যমে সহজেই পানি পাচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, নিউজ টিপিবি এর দায়ভার নেবে না।