রাজশাহী প্রতিনিধি: সবজি উৎপাদনে দেশে অন্যতম জেলা হিসেবে খ্যাত রাজশাহী। সব ধরনের সবজিই উৎপাদন হচ্ছে এ জেলায়। রাজশাহীর উৎপাদিত সবজি এখন যোগান দিচ্ছে রাজধানীর বাজারেও। স্থানীয় ও আশের পাশের জেলার বাজার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীর বাজারেও রাজশাহীর সবজি। বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন করে কৃষক লাভবান না হলেও বাজার সিন্ডিকেটের কারণে লাভের বড় অংক পকেটে তুলছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে বাজারে বাড়ছে সবজির দাম।
রাজশাহীর খুচরা ও পাইকারি সবজির বাজার ঘুরে এবং প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষেত থেকে আড়ৎ তারপর হাত বদল হতেই রাজশাহীতে দ্বিগুন থেকে তিনগুন হচ্ছে সবজির দাম। এ কারণে কৃষকরা থাকছেন উপেক্ষিত। রাজশাহীর অন্যতম পাইকারি সবজির মোকাম খড়খড়ি বাইপাস। সেখানে ক্ষেত থেকে সবজি তুলে বিক্রির জন্য আনেন চাষিরা। এই মোকামে গড়ে উঠেছে সবজির আড়ৎ। সেখান থেকে ট্রাকে করে বিভিন্ন ধরনের সবজি চলে যায় রাজধানী ঢাকায়।
জানা গেছে, গত শুক্রবার খড়খড়িতে প্রতিকেজি আলু ১৩ টাকা, বেগুন ৫ থেকে ১০ টাকা, ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, করলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১৬ থেকে ১৮ টাকা, সজনে ডাটা ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং প্রতিপিস লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খড়খড়ির আড়ৎ থেকে পাইকারি সবজি কিনে নগরীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। অনেকে ভ্যানে ফেরি করেও সবজি বিক্রি করেন নগরীতে। অথচ সেদিনই নগরীর খুচরা বাজারগুলোতে আলু ২০/২৫ টাকা, বেগুন ২০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, ঢেড়স ১০০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩৫ টাকা, সজনে ডাটা ১৬০ টাকা এবং প্রতি পিস লাউ ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ফেরিওয়ালা সবজি বিক্রেতারা বাজারের চেয়ে কিছুটা বাড়তি দামে সবজি বিক্রির করছেন।
পাইকারি সবজি বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, খড়খড়িতে গত দুই সপ্তাহ ধরে সবজির আমদানি কম। শীতকালীন সবজি আর সেইভাবে নেই। ফলে বাজারেও সবজি উঠছে কম। গ্রীষ্মকালীন আগাম কিছু সবজি উঠছে। এছাড়া কিছু শীতকালীন সবজিও আছে। শীতকালীন সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক কম হলেও গ্রীষ্মকালীন আগাম সবজিগুলোর দাম চড়া। পাইকারি সবজি বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, জয়পুরহাট থেকে বাজারে প্রচুর মিষ্টি কুমড়া আসছে। তারা পাইকারি কিনছেন ১৬ থেকে ১৭ টাকা কেজি করে। সেইসঙ্গে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু এখনকার বাজারে মিষ্টি কুমড়া ১৬ থেকে ১৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা লাভ হয়েছে তাদের। খড়খড়ি বাজার থেকে শুক্রবার ১৫০ মণ পেঁয়াজ কিনেছেন শহরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ তুহিন। তিনি বলেন, গ্রাম থেকে গেরস্ত এখানে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসেন। আমি ২০ থেকে ২২ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছি। নগরীর মাস্টার পাড়া বাজারে নিয়ে বিক্রি করবো। কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা লাভ হবে। তবে খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। রাজশাহীর খড়খড়ি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় পাঠান পাইকারি ব্যবসায়ী রফিজ উদ্দিন জীবন। তিনি বলেন, গোদাগাড়ীর বিদিরপুর থেকে আসা পেঁয়াজ তিনি কিনেছেন ২০ টাকা কেজি দরে। ঢাকায় সেই পেঁয়াজ নেবেন। তার আসা এই পেঁয়াজ ঢাকায় বিক্রি হবে ২৫ টাকায়। পরবিহন খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভ রাখবেন তিনি।
তবে প্রান্তি কৃষকরা বলেন, তারা যে পণ্য পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন ২০ টাকা দরে, সেই পণ্য খুচরা বাজারে তাদেরই কিনতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। পবা উপজেলা কৃষক হারেজ উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছ থেকে হাত বদলের পরেই সবজির দাম বৃদ্ধি পায়। সবজি উৎপাদন করে তার মত কৃষক ক্ষতির মুখে পড়লেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, নিউজ টিপিবি এর দায়ভার নেবে না।