রাজকুমার নন্দী : দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। অনেকদিন হলো এ জোটের কোনো কার্যক্রম নেই। সর্বশেষ কবে বৈঠক হয়েছে তা অধিকাংশ শরিকরাই বলতে পারেন না। জোটের ব্যানারে কোনো কর্মসূচিও পালিত হয় না। কার্যত এখন কাগজে-কলমেই জোটের অস্তিত্ব। এমন পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোট টিকে থাকবে কিনা-সে প্রশ্নও উঠছে। এদিকে জোটকে নিষ্ক্রিয় রেখেই বিএনপি বর্তমানে এককভাবে কর্মসূচি পালন করছে। এ নিয়ে জোট শরিকরা ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই ২০ দলীয় জোটকে ঠিকমতো মূল্যায়ন করছে না বিএনপি। এমন অভিযোগ তুলে এবং দীর্ঘদিন ধরে জোটের রাজনীতি অকার্যকর রাখায় বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ইতোমধ্যেই বেশ ক’টি রাজনৈতিক দল জোট ছেড়ে চলে গেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সামনে রেখে ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করার দাবি শরিকদের। তাদের দাবি, সরকারকে সাংবিধানিক ও বৈধ রাজনৈতিক পদ্ধতিতে বিদায় করতে হলে কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। এই আন্দোলনে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।
১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করা হয়। পরে এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এ জোট থেকে বেরিয়ে গেলে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চারদলীয় জোটে সংযুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল চারদলীয় জোটের সঙ্গে নতুন ১৪টি দলের সংযুক্তির মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপির নেতৃত্বে গঠন করা হয় ১৮ দলীয় জোট। পরবর্তীতে জোটে আরও ৫টি দল যোগ দেয়। তবে ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়ায় ২০টি দল নিয়ে এটি এখন ‘২০ দলীয় জোট’ নামেই পরিচিত।
জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোনও জোটকেই প্রাধান্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে দেশি-বিদেশী নানামুখী চাপে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতকে একমঞ্চে রেখে যেকোনও কার্যক্রমেই অনীহা রয়েছে দলটির। তবে ভোট ব্যাংকের কারণে জামায়াতকে ছাড়তে রাজি নয় বিএনপি। জামায়াতকে ধরে রাখতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে দলটি। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকও ডাকা হচ্ছে না। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে জোটগত রাজনীতির প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি অনুধাবন করে এতে নতুনত্ব আনার পক্ষে বিএনপি। তাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সরকারকে বিদায়ে গত বেশ কিছুদিন ধরে ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট’ গঠনের চেষ্টা করছে দলটি। তারা ডান-বাম-ইসলামীসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটকে অক্ষুন্ন রেখে সেই বৃহত্তর জোট গঠন করতে চায় বিএনপি। জানা গেছে, বিএনপির বৃহত্তর ঐক্য গঠনের উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে ২০ দল। তবে ২০ দলীয় জোটকেও সক্রিয় করার দাবি শরিকদের।
২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করার আহ্বান জানিয়েছেন জোট শরিক এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। সম্প্রতি জাগপার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোট পরীক্ষিত জোট, সময়ের পরীক্ষায় এই জোট উত্তীর্ণ। মন্ত্রী-এমপিত্বসহ নানা সুযোগ-সুবিধার অফার থাকা সত্ত্বেও বিএনপিকে বাদ দিয়ে দশম সংসদ নির্বাচনে জোটের কোনো দলই অংশ নেয়নি। অথচ আজকে দীর্ঘদিন ধরে এই জোট নিষ্ক্রিয়, কোনো বৈঠক হয় না। জোটের ব্যানারে কোনো কর্মসূচিও পালিত হয় না। বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. ফরহাদ বলেন, ২০ দলীয় জোট কিংবা জোটের শরিক কোনো দলকে নিয়ে কোনো টেকনিক্যাল অসুবিধা থাকলে দ্রুততম সময়ে তা সমাধান করে পরীক্ষিত এই জোটকে গতিশীল-সক্রিয় করুন।
জোট শরিক এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের একই অনুষ্ঠানে বলেন, ১৪ দলীয় জোটকে যথেষ্ট সম্মান-মর্যাদা দেয় আওয়ামী লীগ। বিপরীত দিকে ২০ দলীয় জোট অবহেলিত। বিএনপি জোটের নিবন্ধিত দলগুলোকে গুরুত্ব দিলেও অনিবন্ধিত দলগুলোকে মূল্যায়ন করে না। অথচ নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সবাইকে নিয়েই ২০ দলীয় জোট। তাই ২০ দলকে নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জানতে চাইলে জোট শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক দৈনিক করতোয়াকে বলেন, ২০ দলীয় জোট যেহেতু এখন দৃশ্যমান কোনো কর্মে নেই- তাই সাংবাদিক, শুভাকাক্সক্ষী ও পর্যবেক্ষকগণ এটাকে নিষ্ক্রিয় বলেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকারকে সাংবিধানিক ও বৈধ রাজনৈতিক পদ্ধতিতে বিদায় করতে হলে কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। এই আন্দোলনে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস এবং সক্রিয়-দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রয়োজন। অতএব দীর্ঘ ১০ বছরের পরীক্ষিত ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করা এখন সময়ের দাবি। যদি ২০ দলীয় জোটে নেতৃত্বের সংকট থাকে সেটাও আলোচনার দাবি রাখে এবং আলোচনার পর এই জোটের নেতৃত্ব ও কর্মপন্থা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দৈনিক করতোয়াকে বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম সামনে রেখে ২০ দলীয় জোটকে কীভাবে আরও সক্রিয় করা যায়- সে ব্যাপারে জোট শরিকদের সাথে বিএনপির আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দলের সাথে আলোচনা হয়েছে, বাকিদের সাথেও শিগগিরই আলোচনা হবে। এরপর আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, নিউজ টিপিবি এর দায়ভার নেবে না।