নিজেরআলোয় ডেস্ক: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে ডুকলা বা শব্দকর জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের মূল পেশা বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবে বাজনা বাজানো (ঢোল বাজানো)। নাগরিক জীবনে উৎসবের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন তাদের কেউ রিকশা চালায়, কৃষিকাজ, দিন মজুরি, শারীরিকভাবে অক্ষমরা ভিক্ষাবৃত্তিসহ নানা পেশায় ঝুঁকেছেন।
অন্যের জমিতে ধান রোপণের কাজ করছিলেন কল্পনা শব্দকর। তার স্বামী ভাড়ায় রিকশা চালান। তাদের ২ মেয়ে ও ১ ছেলে। ২ মেয়ে বাড়ির পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। ছেলে এখনো স্কুলে যায় না।
কল্পনা শব্দকরের মতে, স্বামীর ভাড়ায় চালানো রিকশার আয় দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। স্বামীকে সহযোগিতা ও সংসারের সচ্ছলতার জন্য নিজেও পরের কাজ করেন। এতে যদি কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা হয়। পুরুষ শ্রমিকদের মতো সকালে কাজে যোগ দিয়ে দুপুর পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে আমাকে মজুরি কম দেওয়া হয়।
অন্যের জমিতে ধান রোপণ করছিলেন সরস্বতী শব্দকর। স্বামী-সন্তান নিয়ে তার সংসার। ৩ মেয়ে, ১ ছেলের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। স্বামীর সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানো যায় না। তাই সংসার চালানোর তাড়নায় মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। এখন সেই কাজও তেমন একটা পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে অন্য নারীদের সঙ্গে ধান রোপণের কাজ করছেন।
সরস্বতী শব্দকর বলেন, নারী বলে শ্রমের বিপরীতে ন্যায্য মজুরি পাই না। অথচ পুরুষ শ্রমিকের সঙ্গে সমান তালে একই কাজ করলেও তাদের চেয়ে কম মজুরি পাই।
নারী শ্রমিক মালতী রানী শব্দকরের স্বামী, পুত্র ও শিশুকন্যা নিয়ে সংসার। তার স্বামী কিস্তিতে রিকশা কিনেছেন। রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা থেকে কিস্তি দিয়ে তেমন টাকা-পয়সা থাকে না। সংসার চালাতে কষ্ট হয়।
মালতী রানী শব্দকর জানান, সংসারের খরচে স্বামীকে সাহায্য করতে নিজেও রোজগারের পথে নেমেছেন। তিনিও অপর নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করেন। অথচ নারী হওয়ার কারণে পুরুষের চেয়ে মজুরি কম পান।
কম মজুরিতে কাজ করা প্রসঙ্গে তারা বলেন, সমাজ পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে রেখেছে। উভয়ের শ্রম ও কর্মঘণ্টা সমান হলেও মজুরিতে বৈষম্য রয়েছে। বিকল্প কোনো উপায় না থাকার কারণে অভাবের তাড়নায় কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন। এ মজুরি বৈষমের অবসান চান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, নিউজ টিপিবি এর দায়ভার নেবে না।