নিজেরআলোয় ডেস্ক: অনলাইনের মাধ্যমে আচার বেচে লাখপতি হয়েছেন রুবি আফরোজ। এখন তাকে সবাই চেনে ‘আচারওয়ালি’ নামে। কেউ বা ডাকেন ‘আচার আপু’। ররিশালের মেয়ে রুবির উদ্যোক্তা-জীবন প্রায় আড়াই বছরের। এখন তার বেতনভুক্ত কর্মী পাঁচ জন। এ ছাড়া তার বাবা-মা, ভাই ও স্বামী সহায়তা করেন তাকে।
রুবির জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সব কিছু বরিশালে হলেও গত তিন বছর ধরে স্বামীর কর্মসূত্রে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বর্তমানে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড থেকে তার উদ্যোগ পরিচালনা করছেন। তার সন্তান সমতুল্য দুটো উদ্যোগ। প্রথম উদ্যোগ আনশি চয়েস-এর জন্ম ২০১৯ সালের ২০ জুন আর দ্বিতীয় উদ্যোগ রসনা বিলাস-এর জন্ম ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর। প্রথমে গার্মেন্টস বেইজ এক্সপোর্ট কোয়ালিটির দেশে তৈরি কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে আনশি চয়েস-এর যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু রুবির সব সময়ই মনে হতো, এতে তো তার ক্রিয়েটিভিটির প্রকাশ ঘটাতে পারছেন না।’ আর এ চিন্তা থেকেই তার রসনা বিলাস-এর যাত্রা। রুবি ছোটবেলা থেকে আচার তৈরি করতে ভালোবাসতেন। তাই চিন্তা করলেন, আচার নিয়েই শুরু করবেন তার নতুন উদ্যোগ। কারণ, ভালোবেসে করা যেকোনো কাজেই থাকে আন্তরিকভাবে করার প্রচেষ্টা। আর আন্তরিকভাবে ভালোবেসে করা কাজ নিয়ে এগিয়ে গেলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আচার বিক্রি করে লাখপতি সেলার হয়েছেন।
মূলত আচার নিয়ে কাজ করেন রুবি আফরোজ। বিভিন্ন ধরনের আচার বানান তিনি। রুবির ভাষ্যে, ‘কলিজা ও বাদামের আচার আমার নিজস্ব ক্রিয়েশন। কলিজার আচার আমার সিগনেচার আইটেম। উই-এ আমি শুধু আচারকেই ফোকাস করে পুরো এক বছর পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করেছি। এ ছাড়া পরিচিতি পাওয়ার পরে আমি মিক্সড ড্রাই ফ্রুটস (কাস্টমাইজড) গৌরনদীর সন্দেশ, ঘি আর ফ্রোজেন ফুড নিয়ে কাজ করি। আর আনশি চয়েস পেজের নতুন সংযোজন দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সিরাজগঞ্জ, ঝালকাঠি ও নরসিংদীর তাঁতে বোনা গামছা দিয়ে কুশির নেকের বেবি ড্রেস, নিজস্ব ইউনিক ডিজাইনের টপস, স্কার্ট এবং কাস্টমারদের চাহিদার ভিত্তিতে নিজস্ব ডিজাইনে গামছা দিয়ে তৈরি ইউনিক ফ্যামিলি কম্বো সেট।’
পহেলা বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে প্রস্তুতি? রুবি বলেন, ‘বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। তাই যেকোনো উৎসবেই সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের থাকে নানা আয়োজন। আর উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি ঘরে থাকে বিশেষ খাবারের আয়োজন। আর নতুন নতুন পোশাকে নিজেকে রঙিন করে নেওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। ঈদুল ফিতর আর পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আমিও নানান সিজনাল ফলসহ অন্যান্য ইউনিক সব আচারের পসরা নিয়ে আছি। আমার স্বপ্ন এবারের ঈদে ডাইনিং টেবিলে হরেক রকম খাবারের সাথে থাকবে আমার বানানো ফ্রেশ ও সুস্বাদু সব আচার। আর ছোট-বড় সবার পছন্দের পুষ্টিকর মিক্সড ড্রাই ফ্রুটস হতে পারে আমাদের বেড়াতে যাওয়ার সময় সাথে নেওয়ার জন্য বেস্ট নাশতা। আমি এটাকে কাস্টমাইজড করি, যাতে এর স্বাদ অনেক বেড়ে যায়। আর স্বপ্ন দেখি আমার গামছা দিয়ে তৈরি ইউনিক ডিজাইনের পোশাকে সাজবে দাদু-নাতি, মা-বাবাসহ সবাই। আলহামদুলিল্লাহ, ইতোমধ্যে কিছু ড্রেসের অর্ডার পেয়েছি। কিছু ডেলিভারি দিয়েছি, কিছু প্রোডাকশনে আছে।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রুবি আচার বেঁচে লাখপতি হয়েছেন। তার উই-এ জয়েন করার ছয় মাস, মানে ১৫০ দিন পরে সেল হয়েছে। এই ছয় মাসে একদম ধৈর্যহারা হননি, অ্যাক্টিভিটিও কমিয়ে দেননি। তাই রুবি মনে করেন, উই থেকে কিছু পেতে হলে বা লাখপতি হতে হলে ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে।’
আগামী দিনের পরিকল্পনা কী। রুবি বলেন, ‘অনলাইনে রসনা বিলাসকে আচারের একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই। দেশীয় পোশাকের ক্ষেত্রে গামছা ডিজাইনের পোশাকের মাধ্যমে গামছাশিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে তাঁতিদের সুদিন ফেরাতে চাই। ইতোমধ্যে আমার তৈরি আচার আমেরিকায় গিয়েছে। লোক মারফত। কিন্তু আমি চাই আমার পণ্য একদিন সরাসরি যাবে। দেশের প্রত্যেকটি জেলায় আমার প্রোডাক্ট পৌঁছে দেওয়াও অন্যতম পরিকল্পনা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, নিউজ টিপিবি এর দায়ভার নেবে না।